লাল আটা কি ??
গম এর বৈজ্ঞানিক নাম Triticum aestivum, ইংরেজি নাম Bread Wheat বা Common Wheat.
এটি সকল পরিবেশে জন্মাতে পারে। গমের উপরের লাল আবরন সহ ভাঙ্গানো হলে, আটা লাল রঙের হয় বলে একে লাল আটা বলে। আর যখন রিফাইন্ড করে খোসা ফেলে দিয়ে ভাঙ্গানো হয় তখন তা সাদা রঙের হয়। এই সাদা আটাই আমরা সাধারনত বেশি খেয়ে থাকি।
লাল আটার পুস্টিগুন
গমের বাইরের লাল বা বাদামি আবরণে অনেক পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে। এই আবরণ ম্যাগনেশিয়াম নামক খাদ্য উপাদানে ভরপুর। এটি এক ধরনের খনিজ উপাদান, যা আমাদের দেহের প্রায় ৩০০ রকমের এনজাইমের কাজ পরিচালনা করে। লাল আটায় প্রচুর অদ্রবণীয় খাদ্য আঁশ রয়েছে। এ ছাড়া ফলিক এসিড, ফসফরাস, জিংক, কপার, ভিটামিন বি১, বি২ এবং বি৩-এর ভালো উৎস।
খেতে সুস্বাদু হলেও পরিশোধিত সাদা আটার পুষ্টিগুণ অনেক কম। অত্যধিক পরিশোধনের ফলে দেহের জন্য উপকারী কিছু ভিটামিন ও মিনারেলস নষ্ট হয়ে যায়। রিফাইন্ড আটা থেকে প্রাপ্ত শর্করা রক্তে দ্রুত শোষিত হয়, যেখানে আনরিফাইন্ড আটা থেকে প্রাপ্ত শর্করা ধীরে ধীরে রক্তে মেশে। তাই লাল আটা খেলে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকে।
সুস্থ্য থাকতে লাল আটা
গবেষণা করে পাওয়া গেছে যে, লাল আটার অদ্রবনীয় খাদ্য আঁশ রক্তে কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
এই আটায় লিগনান নামক এক ধরনের উপাদান রয়েছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। হৃদযন্ত্রের জন্য অনেক উপকারী।
প্রচুর ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট থাকায় দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
লাল আটা ওজন কমাতে সহায়তা করে।
কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর করে। পেট পরিষ্কার রাখে এবং পেটের নানা সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় তাই ব্রন হয় না।পুরোনো গম চর্ম রোগ দ্রুত সারাতে সাহায্য করে।
হিস্টিরিয়া বা মৃগী রোগ থেকে মুক্তি পেতে ও সাহায্য করে।
ডায়েবেটিকস এর প্রতিরোধে লাল আটা
সাধারণত খাবার খাওয়ার পর তা কত তাড়াতাড়ি রক্তে শোষিত হয় তা নির্ধারণের ইউনিট হচ্ছে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স।
শর্করাজাতীয় খাবার যেমন_বিস্কুট, কেক, পিৎজা ইত্যাদি খাওয়ার অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়।
লাল আটা দিয়ে তৈরি খাবারে গ্লাইসেমিক ইনডেক্সও কম থাকে।
লাল আটা খুব অল্প রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়। তাই ডায়াবেটিক রোগীদের লাল আটার রুটি খেতে পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতে লাল আটা
রিফাইন্ড আটায় দেহের জন্য উপকারী ভিটামিনস ও মিনারেলসের ঘাটতি থাকায় তা দেহের রক্ত চাপ বাড়িয়ে দেয়। ফলে আমরা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হই।
লাল আটায় দেহের জন্য উপকারী ভিটামিনস ও মিনারেলসের পরিমান বেশি থাকায় এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে।
ত্বকের সুস্থতায় লাল আটা
লাল আটায় বিদ্যমান খাদ্য আঁশ শরীরের টক্সিন-জাতীয় উপাদান বের করে দিতে সাহায্য করে। গায়ের রং পরিষ্কার করে। যার ফলে ত্বক সুস্থ ও সুন্দর থাকে দীর্ঘদিন।
লাল আটা এবং সাদা আটার পুষ্টিগত পার্থক্য
সাদা আটার রুটি ও বাদামি আটার রুটির মধ্যে পুষ্টিগত কিছু পার্থক্য রয়েছে।
যেমন ৩৮গ্রাম সাদা আটার রুটিতে ৮৭ ক্যালোরি, ফ্যাট ৭, কার্বোহাইড্রেট ১৬.০ গ্রাম, খাদ্য আশঁ ১.৫ গ্রাম এবং প্রোটিন ৩.৪ গ্রাম পক্ষান্তরে ৪৬ গ্রাম বাদামি আটার রুটিতে ১২৮ ক্যালোরি, ফ্যাট ২.৫গ্রাম ,কার্বোহাইড্রেট ৯০.১ গ্রাম,খাদ্য আশঁ ২.৮ গ্রাম এবং প্রোটিন ১৫.৫গ্রাম।
সুতরাং দেখা যায় সাদা আটার রুটি থেকে বাদামি আটার রুটির মধ্যে পুষ্টিগুন অনেক বেশি।
সাবধানতা
লাল আটায় অক্সালেট নামক উপাদান রয়েছে। তাই যাদের গলব্লাডারে পাথর রয়েছে এবং যারা কিডনি রোগে আক্রান্ত তাদের লাল আটা খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করা উচিত।

আটা স্বিদ্ধ করে কয়েক মিনিট রেখে দিয়ে তারপর রুটি বানালে রুটির পুষ্টিগুন বৃদ্ধি পায় এবং অনেক সময় ধরে নরম থাকে…
তথ্য এবং ছবিঃ গুগল
0 Comments